December 22, 2024, 8:05 pm
সুত্র, আনন্দবাজার পত্রিকা//*/
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস’ থেকে সম্প্রতি প্রকাশিত করোনাভাইরাস সংক্রান্ত গবেষণা কিছুটা হলেও স্বস্তি জাগাতে পারে উপমহাদেশে। কারণ ওই গবেষণার দাবি, করোনাভাইরাসের মূল যে উপশ্রেণি (সাব-টাইপ) ভারত-বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পশ্চিম এশিয়ায় ছড়িয়েছে, তা যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের উপশ্রেণির তুলনায় এখন পর্যন্ত কম আগ্রাসী।
তবে তারা বলেছেন, ভারত বা বাংলাদেশের যে জনঘনত্ব, তাতে ভাইরাস ‘দুর্বল’ ভেবে বসে না থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাই একমাত্র পথ।
এর ব্যাখ্যায় তারা বলে, এ ভাইরাস সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অতি দ্রুত নিজেকে মিউটেট বা পরিবর্তিত করে আগামী দিনে আগ্রাসী রূপ নিতে পারে। চিকিৎসক এবং গবেষক মহলের একাংশও বলছেন, অতি দ্রুত মিউটেট করার ক্ষমতা রয়েছে করোনাভাইরাসের। তাই যে কোনো সময় এটা আগ্রাসী হয়ে উঠতেই পারে।
ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস প্রায় দেড় শ বছরের পুরান। এ সোসাইটির সদস্য বহু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক এবং অধ্যাপক।
তারা জানায়, এ গবেষণায় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে করোনাভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা চালান হয়। সেই পরীক্ষার ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন মার্কিন বিজ্ঞানী ফরেস্টার এবং তার সহকারীরা। যা প্রকাশিত হয়ে তাদের জার্নালে।
তাদের গবেষণায়, একটি করোনা পরিবারকে তিনটি উপশ্রেণিতে ভাগ করা হয়েছে। এরা হলো এ, বি এবং সি।
গবেষকদের দাবি, আমেরিকা, ইউরোপের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে ‘এ’ এবং ‘সি’-র প্রাবল্য দেখা গেলেও দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভাইরাসের যে ধরনটি মূলত দেখা যাচ্ছে, সেটি ‘বি’। এ থেকে ধরে নেয়া হচ্ছে ভারতে ‘বি’ টাইপ করোনা থাকার সম্ভাবনা অধিক।
কিন্তু, ভবিষ্যতে এই ‘বি’ টাইপ পরিবর্তিত হয়ে ‘এ’ বা ‘সি’ টাইপে চলে যাচ্ছে কি না সেটা বোঝা যাবে সপ্তাহখানেক পরেই। পাশাপাশি এ পর্যবেক্ষণও পরিসংখ্যান থেকেই উঠে আসছে যে, ‘এ’ এবং ‘সি’-র তুলনায় ‘বি’-র মারণ ক্ষমতা এখনো পর্যন্ত তুলনামূলক ভাবে কম। যে সব জায়গায় ‘এ’ বা ‘সি’ করোনাভাইরাস-এর উপস্থিতি বেশি, (যেমন আমেরিকা, ইউরোপ), সেখানকার তুলনায় ‘বি’ এলাকায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এবং মৃত্যুর অনুপাত (ডেথ ইনফেকশন রেশিও) অনেকটাই কম।
ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ভারতের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োমেডিক্যাল জিনোমিক্স’-এর অধ্যাপক প্রিয়দর্শী বসু বলেন, ‘করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ভয়াবহতা যে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন রকম বলে মনে হচ্ছে, তার ব্যাখ্যা দু’রকম। দু’টিই সত্যি। প্রথমত ‘হোস্ট ইমিউনিটি’ বা আক্রান্ত ব্যক্তির রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা। ভারতের মতো যে সব অঞ্চল ম্যালেরিয়া প্রবণ, সে সব জায়গার মানুষের দেহে এমনিতেই একটা প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়ে যায়। বিসিজি ভ্যাকসিন নেওয়ার ফলেও এটা ঘটে থাকতে পারে’।
তিনি বলেন, ‘নতুন গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, করোনাভাইরাস একটি পরিবার। তার নিজের নানা রূপ ও প্রকার রয়েছে। এটাও দেখা যাচ্ছে যে, এর মূল উৎস চিনের উহান। সেখানেই ‘এ’ থেকে পরিবর্তিত হয়ে ‘বি’ এবং ‘সি’ টাইপ তৈরি হয়েছে।’
ভারত তথা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার (ডেথ ইনফেকশন রেশিও) এখনো ইউরোপের যেকোনো দেশের তুলনায় যেহেতু অনেকটাই কম, বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ভারত এখনো পর্যন্ত ‘বি’ ভাইরাস জোনে রয়েছে।
তবে ভারতে (বাংলাদেশেও) পরীক্ষা কম হওয়ার জন্য করোনা-সংক্রান্ত তথ্যও কম ছিল গবেষকদের হাতে।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস জানায়, আগামী সপ্তাহে আরো নতুন তথ্য পাওয়া যাবে।
এদিকে এ পর্যন্ত ভারত এবং বাংলাদেশে করোনা আক্রান্তদের বেশির ভাগেরই কোনো উপসর্গ দেখা যায় না। ভারতে এ সংখ্যা ৮০ শতাংশ।
Leave a Reply